1. live@www.dailyhellobangladesh.online : দৈনিক হ্যালো বাংলাদেশ : দৈনিক হ্যালো বাংলাদেশ
  2. info@www.dailyhellobangladesh.online : দৈনিক হ্যালো বাংলাদেশ :
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ডেমরায় যুবদল নেতার বিরুদ্ধে, রিক্সার গ্রেজে এক যুবককে মারধরের অভিযোগ হত্যার পর মা-বাবাকে ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখেন ছেলে চট্টগ্রামে বিএনপির বাঘে – বাঘে লড়াই খাতুনগঞ্জে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদা দাবি, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন আড়াইহাজারে আন্দোলন সংগ্রামে সরব বিএনপির দুর্দিনের কান্ডারী মাসুম শিকার ৩০০ আসনে চূড়ান্ত জামায়াতের প্রার্থী, দেখুন তালিকা বিএনপির চাঁদাবাজি নিয়ে সরকারকে দোষ দিলেন রুমিন ফারহানা গাজায় নির্বিচার হামলায় নিহত শিশুর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াল কক্সবাজারে ইয়াবা সম্রাট মনির বিজিবির হাতে গ্রেফতার ঢাকা-৫ জাতীয় নির্বাচন: বহু প্রতিকুলতার পর মাঠে ফিরেছে উত্তাপ

ঢাকা-৫ জাতীয় নির্বাচন: বহু প্রতিকুলতার পর মাঠে ফিরেছে উত্তাপ

মো: মাহমুদুল হাসান সোহাগ
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বহু বছর পর জমে উঠেছে ঢাকা-৫। সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে দলীয় নেতাকর্মী—সবাই এক ধরনের নির্বাচনী উত্তেজনায় ভাসছেন। পাড়ায়-মহল্লায়, আড্ডায় কিংবা হাট-বাজারে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আসন্ন নির্বাচন। ভোটাররা হিসাব কষছেন—কোন প্রার্থী কাদের সমর্থন পাবেন, শেষ মুহূর্তে কার দিকে ঝুঁকবে সাধারণ মানুষ। তরুণ ভোটার থেকে প্রবীণরা পর্যন্ত আলোচনা করছেন, কে হবেন এলাকার প্রতিনিধিত্বকারী মুখ। প্রথমবার ভোট দিতে যাচ্ছেন এমন তরুণদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে বাড়তি আগ্রহ।

নির্বাচন কমিশনের প্রধান নাসির উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির রোজার আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। ভোটের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে জুলাই জাতীয় সনদকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি রাজনৈতিক দল অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করলেও তা টেকসই হয়নি। ফলে অভ্যুত্থানপন্থী শক্তিগুলো ঐক্য ধরে রাখার বদলে পৃথকভাবে প্রার্থী দেওয়ার পথে এগিয়েছে। বর্তমানে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী, জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও অভ্যুত্থানপন্থী দলগুলোর আলাদা প্রার্থীরাও নির্বাচনী মাঠে সক্রিয়। একই সঙ্গে বিএনপি জোট থেকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী ঘোষণার গুঞ্জনও ছড়িয়েছে।আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছেন। কেউ পথসভা করছেন, কেউ উঠান বৈঠক আয়োজন করছেন, আবার কেউ জনবসতিতে গিয়ে লিফলেট বিলি করছেন। প্রতিদিন জনগণের সাথে কুশল বিনিময় করে সমর্থন চাইছেন তারা। স্থানীয় নেতাকর্মীরাও প্রচারণায় সক্রিয়।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী ইতোমধ্যেই ধানের শীষ প্রতীককে সামনে রেখে প্রচারণায় সক্রিয় হয়েছেন। তিনি দাবি করেন, আসন্ন নির্বাচন হবে জনগণের নির্বাচন, আর তিনি শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও জনস্বার্থে কাজ করবেন। নবী উল্লাহ নবীর ভাষ্যে, ঢাকা-৫ আসনের বহু অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ রয়েছে, যা তিনি শেষ করতে চান। বিশেষ করে বাঁধের ভেতরে বসবাসরত প্রায় ১০ লাখ মানুষের জলাবদ্ধতার ভয়াবহ সমস্যা সমাধানকে তিনি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবেন। পাশাপাশি একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত ডেমরা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, এলাকায় সরকারি হাসপাতাল, শিশু পার্ক, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার ও মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি আরও আশ্বাস দেন, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে ডেমরা থেকে ওঠার সরাসরি সুবিধা নিশ্চিত করা হবে, যাতে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমে। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন—সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলদার ও মাদকের কোনো ঠাঁই ডেমরায় থাকবে না। দলের কর্মীরা বলেন, নবী উল্লাহ নবী শুধু রাজনৈতিক নেতা নন, বরং দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সুখ–দুঃখে পাশে থাকা একজন আপনজন। ২০১৮ সালের বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে তিনি ৬৭ হাজার ৫৭২ ভোট পান। যা সারা দেশে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে তিনিই সর্বাধিক ভোট পাওয়া প্রার্থী ছিলেন।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)-এর মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদও এবার ঢাকা-৫ আসনে আলোচনায় থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীদের একজন। দলের চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ তাকে এ আসনে সমমনা প্রার্থী করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি দাবি করেন, চারদলীয়, ১৮ ও ২০ দলীয় আন্দোলনে তিনি সামনের সারিতে ছিলেন এবং শেখ হাসিনা সরকার পতন পর্যন্ত রাজপথে সক্রিয় থেকেছেন। তার ভাষ্যে, ২০১৮ সালে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে মনে করে তার ছোট ভাইকে গুম করা হয়েছিল, পরে একরাত রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন সময় তাকে শারীরিক নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় নানা সন্ত্রাস ও ভীতির মধ্যেও তিনি জনগণের পাশে ছিলেন। কয়েকশ বছর ধরে তার পরিবার এলাকায় স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও রাস্তা-ঘাট উন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছে। নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতা, চাঁদাবাজি, মাদক নির্মূল, কবরস্থানের সংকট সমাধান এবং রাস্তাঘাট উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন মতিন সাউদ। তার মতে, সাধারণ মানুষ চান তিনি মনোনয়ন পান এবং সংসদ সদস্য হয়ে এলাকার সেবা করার সুযোগ পান।

একই আসনে প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিশের শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল হোসেন। দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে প্রচারণায় সক্রিয় তিনি অভিযোগ করেন, স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা-৫ আসনে বড় কোনো উন্নয়ন হয়নি, ফলে নাগরিক সুবিধা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানে এখানকার মানুষ বঞ্চিত। মাদক, কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসের বিস্তারকে তিনি এলাকার বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তার দাবি, একসময় বাওয়ানী ও করিম জুট মিলে হাজারো শ্রমিক কাজ করলেও দুর্নীতির কারণে শিল্পগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। নির্বাচিত হলে জুট শিল্প পুনরুজ্জীবন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন তিনি। তার মতে, সৎ, যোগ্য, মানবিক ও শিক্ষিত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলেই জনগণ তার অধিকার ফিরে পাবে। তিনি আশ্বাস দেন, দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করবেন এবং প্রকৃত জনপ্রতিনিধির ভূমিকা প্রমাণ করবেন। তার সমর্থকেরা বলছেন, জনগণ ইতিমধ্যেই তার প্রতি আস্থা দেখাতে শুরু করেছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মূখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) ও ঢাকা-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী এস এম শাহরিয়ার বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করাই তাদের প্রথম কাজ। এ জন্য তারা গণপরিষদ নির্বাচনের প্রস্তাবনা সামনে এনেছেন, যাতে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে ওঠে। বিষয়টি ইতিমধ্যে ঐক্যমত কমিশনে আলোচনার মধ্যে রয়েছে। তার মতে, জুলাই সনদের আইনি কাঠামো সুসংহত না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভাবা অর্থহীন। কারণ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং জবাবদিহিতা আগে নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। তাই তাদের পূর্ণ মনোযোগ এখন জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও সেই ভিত্তিতে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে আছেন এম এইচ মোস্তফা। হাতপাখা নিয়ে এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার অনুসারীরা মহল্লা থেকে মহল্লায় গিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রমের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

আসনের সাধারণ ভোটাররা বলছেন, তারা এমন প্রার্থী চান যিনি এলাকার সমস্যা বোঝেন এবং সমাধানে কাজ করবেন। ডেমরার স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চাঁদাবাজ আর কিশোর গ্যাংয়ের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। অনেক সময় মনে হয় দোকানপাট ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাই। এবারের নির্বাচনে যারা এদের নির্মূল করতে পারবে, তাদেরকেই ভোট দেব। স্থানীয় বাসিন্দা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতা, যানজট আর মাদকের কারণে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বছরের পর বছর একই সমস্যায় ভুগছি। এবার এমন প্রার্থী চাই, যিনি সত্যিকারের মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। তাদের মতে, বেকারত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামো উন্নয়নই এখন এলাকার প্রধান চাহিদা। প্রথমবার ভোট দিতে যাওয়া শিক্ষার্থী তানভীর হাসান বলেন, আমাদের প্রজন্ম চায় আধুনিক ও নিরাপদ ডেমরা। কর্মসংস্থান, খেলাধুলার মাঠ আর ভালো কলেজ চাই। আমরা পরিবর্তন চাই।

দীর্ঘদিন পর ঢাকা-৫ আসনে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে উঠছে, তা ভোটারদের মধ্যে নতুন উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় ইস্যুগুলো—জলাবদ্ধতা, সন্ত্রাস, মাদক ও বেকারত্ব—এবারের নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। আসনে এখন যে হাওয়া বইছে, তাতে জনগণের প্রত্যাশা স্পষ্ট। তারা প্রতিশ্রুতি নয়, সত্যিকারের উন্নয়ন ও পরিবর্তন চান। শেষ পর্যন্ত কোন প্রার্থী ভোটারদের আস্থা অর্জনে সফল হন, সেটিই নির্ধারণ করবে নির্বাচন ফল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট